রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মমতা ব্যানার্জিকে রণচণ্ডী মূর্তিতে সচরাচর দেখা যায় না৷ কিন্তু দার্জিলিং পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে তাদের এলাকায় লড়াইটা নিয়ে গিয়ে ফেলেছেন মমতা ব্যানার্জি৷একেবারে রণং দেহী মূর্তিতে৷ মোর্চা নেতা বিমল গুরুংকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন, হাঙ্গামা করতে গেলে পাল্টা মার পড়বে৷ পাহাড় অচল করার হুমকিতে ভয় না পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন,পাহাড়ে অশান্তি হলে সরকার আইনি রাস্তায় তার মোকাবিলা হবে৷ মমতা ব্যানার্জি এতটাই লড়াইয়ের মেজাজে আছেন যে, মিরিকের সিংমারি এলাকার রাস্তায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এক বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি দেখে সটান মিছিলকারীদের সামনে চলে যান মমতা৷ প্রশ্ন করেন, ভালোর জন্য মিছিল করছেন, না খারাপের জন্য মিছিল? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখে মিছিলকারীরা তখন হতবাক৷ যার বিরুদ্ধে মিছিল, তিনিই সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন! বিক্ষোভের কালো পতাকা হাতেই থেকে যায়, এমনকি স্লোগান দিতেও ভুলে যান মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা৷
সম্প্রতি পুরভোটে দার্জিলিং, কার্শিয়াং জিততে না পারলেও মিরিক দখলে এনেছে তৃণমূল৷ এবার সামনে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, বা জিটিএ’র নির্বাচন৷তাকালেই কাঞ্চনজঙ্ঘা-দার্জিলিংয়ে অভিভাবকের মতো দাঁড়িয়ে আছে মহাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ৷ যে কোনো জায়গা থেকে নজর কেড়ে নেয় তার অপরূপ সৌন্দর্য৷ দার্জিলিং বাংলার আবেগ। পর্যটকদের প্রেম। সেই দার্জিলিংকে সামনে রেখে খেলতে চাইছে এক গুন্ডা। সেটা বাঙালী মেনে নেবে বলে মনে হয় না।
মমতা মিরিকে, কার্শিয়াংয়ে সভা করে বলেছেন, দার্জিলিং হাতে এলে উন্নয়ন কাকে বলে দেখিয়ে দেবেন৷ ওদিকে মোর্চা নেতা বিমল গুরুং এত সহজে পাহাড়ের দখল ছাড়তে রাজি নন৷ অবশ্য গুরুং এখন রাজনৈতিকভাবে বেশ বেকায়দায়৷ একদিকে গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাংয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তাঁর নামে শমন জারি করেছে সিবিআই, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে৷ এ কারণে মু্খ্যমন্ত্রী এবার পাহাড়ে গিয়েই হুমকি দিয়েছেন, জিটিএ তহবিল নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ আছে৷ তাই রাজ্য সরকার জিটিএ’র সব খরচের হিসেব অডিট করাবে৷ কোনও গরমিলের প্রমাণ পেলে, যে বা যারা দোষী, তাদের শাস্তি পেতে হবে৷
মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি শুনে বিমল গুরুং অবশ্য বলছেন, মমতা আগে তাঁর নারদা-সারদা দুর্নীতির তদন্ত করুন, তারপর না হয় মোর্চার দুর্নীতি ধরতে আসবেন৷ কিন্তু গুরুং যে স্বস্তিতে নেই, এটা স্পষ্ট৷ তার আরও একটা বড় কারণ, পাহাড়ের আগের মতো লোককে খেপিয়ে দিয়ে জঙ্গি আন্দোলন আর করা সম্ভব হচ্ছে না৷দার্জিলিংএর মানুষ আসতে আসতে বুঝতে পারছে যে দার্জিলিং মূলত পর্যটন-নির্ভর জেলা৷পর্যটক না এলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। বিক্ষোভ আন্দোলনের জেরে সেই পর্যটন মার খাবে, এটা আর হতে দিতে চাইছেন না স্থানীয় হোটেল মালিক এবং পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা৷ ফলে কর্মসূচি ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসতে হয়েছে মোর্চাকে৷ এমনকি এক সন্ধে গোটা দার্জিলিং পাহাড়ে আলো না জ্বালিয়ে, অন্ধকার রেখে প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচিও বাতিল করতে হয়েছে পর্যটকদের অসুবিধার কথা ভেবে৷
যে কারণে এখন রাজ্য সরকারের সদ্য ঘোষিত ভাষা নীতি নিয়ে বিক্ষোভ তৈরি করতে চাইছেন৷সেটার বিচ্ছিন্নতাবাদী ব্যাখ্যা করে গুরুংরা সাধারন মানুষকে ক্ষেপীয়ে তুলতে চাইছে। মমতা ব্যানার্জির সরকার বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের সব স্কুলে বাংলা পড়াতে হবে৷ তা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বিমল গুরুং৷ বলছেন, পাহাড় অন্য ভাষা-সংস্কৃতির অনুসারী, এখানে জোর করে বাংলা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না৷ প্রতিবাদে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রচার, মিছিল, মিটিং শুরু করে দেয় মোর্চা৷ মমতা ব্যানার্জি তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেন, দার্জিলিংয়ের মতো জায়গায় বাংলা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে থাকবে৷ কোনও কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হবে না৷ কিন্তু তার পরেও বিমল গুরুং ভাষার ইস্যুতে নতুন করে গোর্খা জাতিসত্তার আন্দোলন খুঁচিয়ে তুলছেন খবর পেয়েই কার্যত সপার্ষদ পাহাড়ে গিয়ে শিবির ফেলেছেন মমতা৷ লড়াইটাকে নিয়ে গেছেন একেবারে বিমল গুরুংয়ের দরজায়৷ এবং পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে৷ কিন্তু মমতা ব্যানার্জি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বিনা যুদ্ধে তিনিও সূচ্যাগ্র মেদিনী ছাড়বেন না৷
আসলে যে আন্দোলনের সূচনা ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে একেবারে পিছু হটতে চাইছে না মোর্চা। তারা আন্দোলন জারি রাখতে বদ্ধপরিকর। সেইসঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে পরিস্থিতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রশাসন কড়া হাতে পাহাড়ে মোর্চার আন্দোলন দমনে নেমেছে। এমতো পরিস্থিতিতে যে কোনও সময় গ্রেফতার হতে পারেন মোর্চা নেতারা। এমনকী মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্বেরও গ্রেফতারের সম্ভাবনা রয়েছে।
কোন পথে আগামীদিনে মোর্চার আন্দোলন হবে তার চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির বৈঠকে বিমল গুরুঙ্গ
সবদিক বিচার করে আপাতত জঙ্গি আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসাই শ্রেয় মনে করছেন বিমল গুরুঙ্গরা। জঙ্গি আন্দোলন পথে থেকে সরে এসে গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন জারি রাখা হবে। তাহলে সব দিক বজায় রাখা যাবে বলে মনে করছে নেতৃত্ব।এদিন বৈঠকে এই প্রসঙ্গেই আলোচনা হতে পারে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
কিন্তু কেন বিমল গুরুঙ্গ জঙ্গি আন্দোলনের পথ থেকে সরে এলেন?
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিমল গুরুঙ্গ বুঝে গিয়েছেন তাঁর একাধিপতের দিন শেষ হয়েছে। পাহাড়ে জনসমর্থন কমতে বসেছে মোর্চার। এখন জঙ্গি আন্দোলন চালিয়ে গেলে জনসমর্থন যদি আরও কমে যায়, তাহলে বিপত্তি। সামনেই জিটিএ নির্বাচন। দিনের পর দিন পাহাড়ে বনধ চালালে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে বাধ্য। আর সেটা একেবারেই চাইছেন না গুরুঙ্গ। তাই মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আন্দোলনের নয়া রূপরেখা তৈরি করে ফেলতে চাইছেন তিনি।
এতো কিছুর মধ্যেও রোশন গিরের সাখে বিজেপির দিলীপ ঘোষের বৈঠক কি ইঙ্গিত করছে? বাংলাকে ভাঙার চক্রান্ত চলছে?
রক্ত দিয়ে আত্মবলিদানে যেমন রোখা গিয়েছিল আলাগ খালিস্তানের দাবি বাঙালিও কি সেই পথে, প্রয়োজনে যা কিছু পরিস্থিতিই হোক না কেন আলাগ গোর্খাল্যান্ড হতে দেবে না। দার্জিলিং মানে আমাদের প্রেম আমাদের “শেষের কবিতা”।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ২৩ নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে খুন সহ সরকারি সম্পত্তি ধংশ ও হামলার উদ্দেশ্যে জমায়েতের মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাঁচ বছর আগে গোর্খা লীগ নেতা মদন তামাং খুন হন প্রকাশ্য ম্যালের রাস্তায়। মদন ছিলেন শিক্ষিত নেতা। কথাবার্তায় কোমল। দিল্লির সব দলের নেতাদের প্রিয়পাত্র। মুখ ফসকে একটা মারাত্মক কথা তিনি বলে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘সব পর্দা ফাঁস কর দেঙ্গে।’ কিসের পর্দা? দুর্নীতির। যাঁরা দার্জিলিং চালাচ্ছেন তাঁদের পকেটে টাকার সুনামি। সাধারণ মানুষের কপালে শূন্য। যার অন্ন নেই। মাথার ওপর ছাদ উড়ছে। শিশুরা এক ফোঁটা দুধের জন্য কাঁদছে। তাদের দিকে তাকালে শাসকদের চলে কী করে? কিছু মানুষ ভোগ করবে, বাকিরা দুর্ভোগ সইবে- এটাই তো নিয়ম।
দার্জিলিং চালায় ‘জিটিএ’। যার পুরো নাম গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। যার কর্ণধার বিমল গুরুং, মদন তামাং খুনের মামলায় অভিযুক্ত। বিমল, গোটা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা সুভাষ ঘিসিংয়ের শিষ্য। বিমল, গুরুকে হটিয়ে অন্য দল গড়ে ক্ষমতা দখল করেছেন। যেহেতু দার্জিলিং আলাদা রাজ্য নয়, তাই বিমলের পদমর্যাদা মুখ্যমন্ত্রীর থেকে একটু নিচুতে কিন্তু ক্ষমতা যথেষ্ট। তহবিলে অঢেল সম্পদ। এমন একজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ কল্পনা করা যায় না। নেতারা টাকা-পয়সা এদিক-সেদিক করেন; কিন্তু খুন করে এমন কথা বড় একটা শোনা যায় না।
মদনকে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা সাবধান করেছিলেন। বলেছিলেন, পর্দা ফাঁস করার কী দরকার। আপনি হাতে সবজি কাটার ছুরি ধরতে পারেন না। মাস্তানদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন কোন সাহসে। এই পরামর্শ গ্রহণ করলে মদনকে হয়তো বেঘোরে প্রাণ দিতে হতো না।
দার্জিলিংয়ে গোটা আন্দোলনের জনক সুভাষ ঘিসিং। দার্জিলিং আর ডুয়ার্স নিয়ে তিনি গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি তোলেন। এর ভিত্তিতেই ১৯৮৮ সালের ২২ আগস্ট গঠিত হয় দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ। ১৯৯২ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নেপালি ভাষা অষ্টম তফসিলে যুক্ত হয়।
সুভাষ ঘিসিং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ায় দার্জিলিংয়ে নৈরাজ্য দেখা দেয়। দুর্নীতি গ্রাস করে পাহাড়কে। ২০০৭ সালে সুভাষের শিষ্য বিমল গুরুং নতুন দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা গঠন করেন। তিনি পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি তোলেন। সে দাবি মানা হয়নি। ২০১১ সালের ১৮ জুলাই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গঠিত হয়। এর কর্ণধার হলেন বিমল গুরুং। বিমলের এই পদ লাভের আগেই মদন তামাং খুন হন। মদন বেঁচে থাকলে কি বিমলের সাফল্য সম্ভব ছিল? হিমালয়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে প্রশ্নটা। বিমলের নামেও চার্জশিট দেওয়ায় রাজনৈতিক সমস্যা আরো গভীর। জিটিএ থেকে বিমলকে হটানোর দাবিও উঠেছে পাহাড়ে। বলা হচ্ছে, যিনি খুনের মামলায় জড়িত তিনি শীর্ষ প্রশাসনিক পদে থাকেন কী করে।
বিপদে পড়েন বিমল, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। মমতা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। এতে তাঁর কোনো হাত নেই। তদন্তের সূত্রেই বিচার। বিচারের রায় মানতে হবে। হতাশায় ভেঙে পড়েছেন বিমল। তিনি গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এখন মুখ্যমন্ত্রী হওয়া দূরের কথা, জিটিএর শীর্ষ পদ বাঁচানোই কঠিন। বিমল শুধু নন, তাঁর দলের প্রথম সারির সব নেতাই জালে জড়িয়েছেন।
সুভাষ ঘিসিং আর নেই। তাঁর দল গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট তো আছে। তার নেতারা বিমলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এমন মওকা তাঁরা ছাড়বেন কেন। অন্য ছোট ছোট দলও বিমলের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে। ২০১২ সালের ২৯ জুলাই জিটিএর নির্বাচনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছাড়া কোনো দলই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি। বিমলের মাস্তানিতে দার্জিলিংয়ে তখন থরথরি কম্প। এবার বিমল গাড্ডায় পড়েছেন।
দুঃসময়ে হরতালকেই হাতিয়ার করে এগোতে চেয়েছিলেন বিমল। পাবলিকের পাল্স টিপে বুঝেছেন তাতে বিপদ আরো বেশি। বিমলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। মানুষ তাঁকে সহ্য করতে পারছে না। জনতার বিরুদ্ধে গিয়ে হরতাল চালানো যায় না।
উত্তরবঙ্গের বাম নেতা, তৎকালীন রাজ্যের পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়, এটি পরিকল্পিত খুনের ঘটনা৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাহাড়ে যে সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছে, শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে সরব ছিলেন মদন তামাং৷ তিনি পাহাড়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাক দিয়েছিলেন৷ তাই তাঁকে খুন করা হল৷
সিপিএম এর যা স্বভাব তার বিরুদ্ধে যায় কি করে সিপিএম নেতারা? মদন তামাং এর মৃত্যুর সাথে সাথে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে সিপিএম। অশোক ভট্টাচার্য এবং বামফ্রন্টের সঙ্গে মদন তামাং-এর সুসম্পর্ক ছিল৷ এবং পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের রাশ এখন যাদের হাতে, সেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে তীব্র বিরোধ ছিল মদন তামাং-এর দল গোর্খা লিগ-এর৷ পৃথক গোর্খা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন যিনি, সেই সুবাস ঘিসিং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাপটে পাহাড়-ছাড়া হলেও, মদন তামাং মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন৷
কিন্তু মোর্চার তরফ থেকে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সম্পাদক রোশন গিরি৷ তিনি বলেন, গোর্খা লিগের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা-র রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, এটা ঠিক৷ কিন্তু সেই বিরোধ একেবারেই মতাদর্শগত বিরোধ৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা খুন জখমের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, দাবি করেছেন রোশন গিরি৷
মহাকরণে এই খুনের খবরে উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক হয়৷ কয়েকদিনের বনধ – পাল্টা বনধে এমনিতেই উত্তপ্ত ছিল দার্জিলিং, ডুয়ার্স অঞ্চল৷ এই খুনের জেরে যাতে পরিস্থিতি আরও জটিল না হয়ে ওঠে, সেজন্য জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্য সরকার৷ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যসচিব৷
পাহাড়ে মোর্চার আন্দোলন কোন পথে? তা ঠিক করতেই স্ট্র্যাটেজি বৈঠকে বসছেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুঙ্গ। সিংমারিতে নিজের বাড়িতে মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছেন। এই আন্দোলন কোন পথে জারি রাখা হবে? কীভাবেই বা হবে এই আন্দোলন? সেইসঙ্গে কোন ইস্যুতে এই আন্দোলন চলবে তা নিয়েই চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করাই লক্ষ্য মোর্চা নেতৃত্বের।