সমাজে একটা কথিত আছে যে বংশ পরিচয় ব্যক্তি জীবনকে প্রভাবিত করে। কথাটা কতটা ভুল কতটা ঠিক তা নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তবে আমার স্বল্প জ্ঞানে যতটুকু জেনেছি তাতে বহু সাধুর সন্তান চোর হয়েছে বা চোরের সন্তান সাধু। এমন উদাহরন ভুরি ভুরি আছে। এই তালিকাভুক্তিতে প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের সন্তানরাও রয়েছে। তাই ব্যক্তি তার কর্মে মহান হয় শুধুমাত্র বংশ পরিচয়ে নয়, এই কথাটা টেবিল ঠুকে বলা যায়।
সততা, নিষ্ঠা ও কর্ম দক্ষতার দ্বারা যে সমাজের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হয়ে উঠতে পারা যায় তার জাজ্বল্য উদাহরন- অধীর চৌধুরী।
আপনার জীবনের আদর্শ কোন কোন ব্যক্তিত্ব? উত্তরে বলেছিলেন, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও রাজীব গান্ধী। জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। এই সার সত্যের পথ থেকেই রসদ সংগ্রহ করে মানব সেবার পথ চলা। তাই আজও দুঃস্থ ও অসহায় মানুষজনের পরম বন্ধু অধীর চৌধুরী।
ডান হাত করলে বাম হাত জানতে পারে না। নীরবে ও নিরলসভাবে কতো অসহায় মানুষকে সাহায্য করেছেন সে খবর কজনাই বা জানে। আসলে তিনি জানতে দেন না।
ফতেপুর গ্রামের একচিলতে খুপরি ঘরে দিনমজুর আদিবাসি হেম্ব্রম সপরিবারে বসবাস করে। কালেদিনে পরিবার বড় হয়েছে তাই বাকি সদস্যদের মাথা গোঁজার স্থান করে নিতে হয়েছে গবাদি পশুর পাশাপাশি। জঠর জ্বালা মেটাতে প্রতিদিন কঠিন দারিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয় তবুও শত কষ্টের মধ্যেও ছেলে অকাল হেম্ব্রমের পড়াশোনায় খামতি রাখেননি।গরিব বাবার স্বপ্নও সফল করেছিল অকাল হেম্ব্রম, মাধ্যমিকে ৮০% নম্বর নিয়ে তিনটি বিষয়ে লেটার পেয়ে।কিন্তু এই পর্যন্ত গিয়ে অকাল হেম্ব্রমের পড়াশোনা থেমে যেতে বসেছিল।
অকাল হেম্ব্রমের কথা অধীর চৌধুরীর কানে পৌছয়। ২০০৩সালের ১০ই জুলাই অধীর চৌধুরী পৌঁছে গেলেন ফতেপুর গ্রামে অকাল হেম্ব্রমের বাড়ি। অকালে কাঁধে হাত রেখে জবান দিলেন, “আজ থেকে তোর পড়াশোনার সব দায় দায়িত্ব আমার। তুই একদম ঘাবড়াবি না, আমি আছি”।
পরে কোন এক সাংবাদিক ঘটনাটি শুনে অধীর চৌধুরীকে প্রশ্ন করেছিলেন—দারুন কাজ করেছেন দাদা, আপনার সাহায্য পেয়ে মেধাবি ছাত্রটি নিজেকে ধন্য মনে করছে। জবাবে, অধীর চৌধুরী বলেছিলেন- “ওর পাশে বড় দাদা হিসাবে দাঁড়াতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি”।
ঘটনা এখানেই থেমে নেই, ২০১৬সালে কলকাতার বেলেঘাটা নিবাসী কল্পনা চ্যাটার্জির ছেলে সৌমিক চ্যাটার্জি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে M.S.C. computer science এ টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিল না। অসহায় মা বেলেঘাটার এক স্থানীয় কংগ্রেস নেতার মাধ্যমে অধীর বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অধীর বাবু সব শুনে, আর কালবিলম্ব না করে সমস্ত ভর্তির টাকা দিয়ে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কল্পনা বা তার ছেলে সৌমিক আজ অধীর বাবুকে মনে রেখেছে কিনা তা নিয়ে অধীর বাবুর মাথা ব্যাথা নেই। এমনই মানুষ অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
এমন আরও কতো ঘটনা অজানা রয়ে গেছে কে তার খবর রাখে। অধীর বাবু নিজে রাখেন কি? এ মানুষকে কি দূরে সরিয়ে রাখা যায় ?????