টেনিদার “চৈনিক” রহস্য যে আসলে চীন ঘটিত তা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর পাঠক মাত্রই জানে।নলেন গুড়ের রহস্যটাও বড় জটিল।বড় বড় অভিধানে মাথায় গাট্টা মেরে বুঝিয়ে দেওয়া হবে নব-নওল-নলেন-নলিয়ান। অর্থাৎ শীতের প্রথম বা নতুন গুড়ই(খেজুর) নলেন গুড়। নলেন গুড়ের চল যেহেতু অতি প্রাচীন,কোন দ্রাবিড়িও বা অস্ট্রীক শব্দ এর আদিতে ছিল কি না আমাদের জানা দরকার। বাংলা-দ্রাবিড় আভিধানে “ণরক্কু” বা “ণরকু” বলে যে শব্দটি পাওয়া যাচ্ছে,তার অর্থ কাটা বা ছেদন করা। এই শব্দটি চমকে দিল। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায “বঙ্গীয় শব্দকোষ”অভিধানে নরশনি,নরসুন্দর বা নরুন শব্দগুলি কর্তন বা ছেদক অর্থবোধক। নরশনি মানে ক্ষুরধার কাটারি,নরসুন্দর মানে দাড়ি- গোঁফ ও চুল কাটার নাপিত,নরুন মানে নখকাটার যন্ত্র। ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তিনটি শব্দের উৎপত্তিতে “ণরক্কু”( নরকু) দ্রাবিড় শব্দটি কলকাটি নাড়ছে, যদিও বাংলা ভাষার কোন আভিধানেই শব্দ তিনটির দ্রাবিড়িও উৎসের কথা বলা হয়নি। সব ক্ষেত্রে সংস্কৃত শব্দের গোঁজামিলে ভরা শব্দের অবতারনা করা হয়েছে। জোর দিয়ে বলা যায় নলেন বা নলিয়ান শব্দটির উৎপত্তিতে দ্রাবিড়িও “নরকু” শব্দটির ভূমিকা আছে। ক্ষুরধার কাটারি বা কাতান বা শিউলি দিয়ে খেজুরগাছের উপরিভাগ কেটে ও ছেঁচে পরিস্কার করলেই খেজুর রসের দেখা মেলে। কলসি ভরা খেজুর রস নামিয়ে উনুনে জ্বাল দিলে তবেই মেলে নলেন গুড়,অতএব মূল কথাটি “ণরকু”শব্দজাত। নরিয়ান-নলিয়ান-নলেন। শীত শেষ হওয়ার মুখেও কিন্তু খেজুর রস এবং “নলেন” গুড় মেলে। “নতুন” হলেও পুরনো হয়ে গেছে এতদিন। খেজুর গাছ চাঁছা চলতেই থাকে।