বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে অদ্বিতীয় এবং অনবদ্য অভিনেতার নাম পাহাড়ি সান্যাল।তিনি ১৯০৬ সালে ২২শে ফেব্রুয়ারি দার্জিলিং এ জন্মগ্রহন করেন।
সমগ্র অভিনয় জীবনে পাহাড়ি সান্যাল উত্তমকুমারের মতো নায়ক হয়ে উঠতে পারেন নি বা ছবি বিশ্বাসের মতো দুঁদে অভিনেতা। না, একদমই ছিলনা তুলসী চক্রবর্তীর মতো কমেডির সেন্স অফ টাইমিং। কিন্তু একথা মানতেই হবে যে তিনি নিজের মতো করে বাংলা চলচ্ছিত্রে আলাদা আসন তৈরি করে নিয়েছিলেন। তাই বাংলা চলচ্ছিত্রের আলোচনা পাহাড়ি সান্যালকে বাদ দিয়ে করা যায় না।
লখনউ শহরে শৈশব ও যৌবন কাটানোর সুবাদে তেহজিব আর হিন্দি ভাষাটা ভালোই রপ্ত ছিল যা পরবর্তীকালে হিন্দি চলচ্চিত্রে আসার সময় কাজে দিয়েছিল।
কোন দিন অভিনেতা হবেন এমন বাসনা ছিল না। সংগীতজ্ঞ বাবার অনুপ্রেরনায় লখনউতে শুরু হয় হিন্দুস্থানি ধ্রুপদ সঙ্গীতের চর্চা। লখনউ সঙ্গীত কলেজ থেকে সঙ্গীতের ডিগ্রি নেন।
১৯৩৩ সালে নিউ থিয়েটার্সের ব্যানারে প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর ‘ইহুদি লড়কি’ সিনেমাতে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন। সিনেমাটিতে কে এল সেইগাল, গুল হামিদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে পাহাড়ি সান্যাল অভিনয় করে। এরপর তিনি একাধিক বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সত্যজিৎ রায়, রাজ কাপুরের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন। বাংলা ও হিন্দি ভাষার বাইরে গিয়ে জেমস আইভরির ‘দা হাউসহোল্ডার’ সিনেমায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেন।
হিন্দি সিনেমা আরাধনা থেকে শুরু করে বাংলা সিনেমা সুচিত্রা সেনের হারানো সুর, সবখানেই তিনি বাবার ভুমিকায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু কয়েকটি সিনেমায় তার অভিনয় নায়ক নায়িকাদের ছাপিয়ে গেছে, যেমন ‘চণ্ডীদাস’।
অ্যামেচার থিয়েটার থেকে পেশাদারি মঞ্চ, সর্বত্র ছিল অবাধ যাতায়াত। বড় বড় স্টারেদের মাঝেই স্বমহিমায় উজ্জ্বল থাকতেন পাহাড়ি সান্যাল।
অভিনয়দক্ষতা, দরাজ মন, গানের গলা, নবাবী মেজাজ সব মিলিয়ে পাহাড়ী ছিলেন একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। লার্জার দ্যান লাইফ পার্সোনালিটি মানুষটি প্রয়াত হয়েছিলেন ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ সালে।