আজ রাত ৮.৫২ মিনিটে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে প্রয়াত হলেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের বড়মা বীনাপানি দেবী।
রবিবার বীণাপানি দেবীকে এস এস কে এম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সারাদিন বিশেষ চিকিৎসক দল আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেন কিন্তু শেষ রক্ষা করা যায়নি।
মৃত্যুকালীন তার বয়স নিয়ে সামান্য বিতর্ক রয়েছে, সঙ্ঘের কারোর মতে ৯৮ আবার কারোর মতে ১০০। পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মতুয়া ঠাকুর বাড়িতে প্রয়াত বীণাপানি দেবীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সরকার।
সকাল ৭.৩০মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে মরদেহ যশোর রোড ধরে ঠাকুর নগরে নিয়ে যাওয়া হবে।
ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে পূর্ববঙ্গে (অধুনা বাংলাদেশ) “পতিত পাবন” হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের হাত ধরে নমঃশুদ্র ও অন্যান্য অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নবজাগরণ আন্দোলন হয় এবং এই আন্দোলন ‘মতুয়া ধর্মান্দোলন’ নামে প্রসার লাভ করে ।
১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে মতুয়া ভক্তবৃন্দ’দের নিয়ে জোনাসুর ‘নীল কুটিয়াল’ ডিক সাহেবের নীল কুটি অভিযান করেন । জমিদার মহাজনদের শোষন ও ব্রাহ্মণ্যতান্ত্রিক সমাজের কঠোর অনুশাষনের হাত থেকে পরিত্রান পেতে, ইসলাম বা খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত না হয়ে বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠী হরিচাঁদ’কে ত্রাতা বা অবতার মেনে তাঁর ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন ।
জমিদার সূর্যমনি মজুমদারের অত্যাচারে ঠাকুর পরিবার ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দী গ্রামে আসতে বাধ্য হন । ভক্ত দশরথের উপর নায়েবের অত্যাচারের বিচারের জন্য তিনি মহিলা কাছারি প্রতিষ্ঠা করে বিচারকের আসনে নারী শক্তিকে মনোনীত করেন । তৎকালিন সমাজ ব্যবস্থায় যা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ।
হরিচাঁদের দর্শনকে পাথেও করে জাগতিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করেন পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর । ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে নিজের বাড়িতে প্রথম ‘পিছিয়ে পড়া’ শোষিত জাতির শিক্ষার জন্য বাংলা মাধ্যম পাঠশালা স্থাপন করেন । ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে গুরুচাঁদ ঠাকুরের তিরোধান ঘটে ।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে খুলনার লবনচোরায় বিলাত ফেরত ব্যারিস্টার তথা গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাতি পি, আর, ঠাকুর উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ঠাকুরনগর গ্রামে মতুয়া মহাসংঘ গঠন করেন । যা আজ ‘সারাভারত মতুয়া মহাসংঘ’ নামে পরিচিত ।
বঙ্গীয় আইন পরিষদে ব্যারিস্টার পি, আর, ঠাকুর ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে MLC নির্বাচিত হন এবং ওই বৎসরই গুরুচাঁদ ঠাকুরের অনুগামী ১/ শ্রী যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল, ২/ শ্রী মুকুন্দ বিহারি মল্লিক, ৩/ শ্রী গয়ানাথ বিশ্বাস, ৪/ শ্রী দ্বারিকানাথ বারুরী, ও (দুই জন রাজবংশী) ১/ শ্রী ক্ষেত্রনাথ সিংহ, ২/ শ্রী নগেন্দ্র নারায়ন রায় ডঃ বি, আর, আম্বেদকরকে গণপরিষদে নির্বাচিত করেন ।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে শ্রীধাম ঠাকুরনগরে মতুয়াধর্ম মহামেলার সূচনা হয় । ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে সারাভারত মতুয়া মহাসংঘের তৎকালীন সংঘাধিপতি ৺কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় কলকাতার রাজারহাটে ‘হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুর রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠিত হয় । ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৫-ই জুলাই ঠাকুরনগরে পি, আর, ঠাকুর গভর্নমেন্ট কলেজ স্থাপিত হয়