শেষ চিঠি
————- অনির্বাণ ভট্টাচার্য
বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে
চিঠি ফিরে এসেছে যখন তুমি নেই
বাড়িটি সেখানে আছে, তালা ঝুলছে
মরচে পড়া তালা
পিওন ফিরিয়ে দিয়ে গেল চিঠি
ছেড়ে চলে গেছ বলে
আরেকটি বাড়ি কি তবে পেয়ে গেলে
সঠিক মুদ্রায় !
ঠিকানা জানিয়, বোলো বাড়িতে ক’খানা ঘর
আলো আসে কি না
বারান্দায় টবগুলি সাজিয়ে রেখেছ কি না
ফুল ফোটে কি না
সমস্ত জানিয়ে দিয়
আঁকা বাঁকা অক্ষর সাজিয়ে
চিঠি আমি ফিরিয়ে দেব না
বেঁচে আছি।
( চিঠিঃ শক্তি চট্টোপাধ্যায়;যোগব্রত চক্রবর্তীর স্মৃতিতে) কি অসামান্য বুনন,এই কবিতাটির।বিষয়বস্তু একটা চিঠি হলেও কত কি যে বলা আছে সবটুকু লিখেও প্রকাশ করা যায় না।এহেন চিঠি বস্থুটির আজ বড়ই অকাল, লুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য,শুধু আমাদের সমাজে নয়, সমস্যা সারা বিশ্ব জুড়ে।ভাষায় লিখে মনের ভাব প্রকাশের এই সুপ্রাচীন উপকরণটি আজ পস্তুরিভুত।জায়গা করে নিয়েছে টেলিগ্রাম(সেও আজ পরিত্যক্ত),ফ্যাক্স,টেলিফোন,মোবাইল ফোন,মেসেজ ইত্যাদি।সেখানে পরিসর কম,বিষয়বস্তুও সংক্ষিপ্ত,কাজেই মনের ভাবের পরিবর্তে ফোনের ভাব ভাবান্তর প্রধান। সভ্যতার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতি বাঁচিয়ে চলেছে,সময়, পরিশ্রম, খানিকটা টাকা পয়সা—কিন্তু চিঠি লেখার মত একটি শিল্প আজ “রুগ্ন শিল্প” নয়,শিল্পের কঙ্কাল।যা হয়ত অদূর ভবিষ্যতে ঠাই পাবে জাদুঘরে।আগামী প্রজন্ম পড়বে “…… সেকালের মানুষ চিঠি পত্রের আদান প্রদানের মাধ্যমে মনের ভাব বিনিময় করত”।চিঠি ব্যাপারটার শুরুই হয়েছিল যেখানে “পত্র দ্বারা নিমন্ত্রনের ত্রুটি মার্জনা করবেন”।– সেখানেও হয়ত আর কদিন বাদে দেখতে পাবো,মঙ্গলঘটের ওপর ডাব বসানো একটা ছবি বাল্ক এস এম এসের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের কাছে আর সঙ্গে এক কুচি লেখা ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। চিঠি আটকে পড়ে আছে গতির জ্যামেতিক বাঁকে। উদ্বোধন,হালখাতা জাতীয় কিছু নৈমিত্তিক উপলক্ষ্য ছাড়া চিঠি আজকাল বিরল বস্তু।তবুও বিদ্যালয়স্তরে পড়ুয়ারা পত্ররচনা দুলে দুলে মুখস্ত করবে। কিন্তু নিজেরা মৌলিক ভাবে স্বাধীন চিন্তা ভাবনা নিয়ে পত্ররচনা করবেনা।বাংলা স্বরবর্ণের “ ৯ ”(লি’ কার) এর মত একদিন ডিগবাজি খেয়ে আর উঠবে না।
(ধারাবাহিক)
আরও অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধীয় তথ্য জানতে প্রতিদিন চোখ রাখুন “একবিংশ”-র পাতায়।