আবার অযর্মা উপন্যাসেও দীর্ঘ সময় ধরে পত্রালাপ চলেছে। পড়লে কাব্যউপন্যাসের মত স্বপ্ন বোনা যায়। ভালবাসার ফোঁটা ফোঁটা নির্যাসে ভেজা শব্দ – আধভাঙা খোপা, বাঁকা টিপ, বুক থেকে খসে পড়া আঁচল, সব মিলিয়ে প্রেমপত্র একটা তৃষ্ণার কথাই যেন বার বার বলে ওঠে। ‘কি কথা আজ লিখেছে সে যে…..’ আর এমন তৃষ্ণার্ত হয়েই তো সত্যজিতের অপু (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়)- র আর তর সয়নি। অধীর কৌতুহল ও আবেগের বসে ভীড় ঠাসা ট্রামেই চিঠির ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করে দেয়। সদ্য বিবাহিত সুন্দরী স্ত্রীর বিরহ যন্ত্রনায় কাতর অপূর্বর মুখের আলোর ঝলকানি সংক্রামিত হয় পাশের দাঁড়িয়ে থাকা সহযাত্রীর মধ্যে। কৌতুহলবশত সেও উঁকি মারে চিঠির লেখায়। অপ্রস্তুত অপুর অভিব্যক্তি মহান চিত্র পরিচালক সত্যজিত রায়ের হাতে পড়ে এক স্বর্গীয় ফ্রেম তৈরী করে। জীবনানন্দ দাস. নীরদ সি চৌধুরী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ অসাধারণ সমস্ত পত্র রচনা করে গেছেন।
এসব যেমন একদিকে রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিখ্যাত মানুষদের চিঠি যাদুঘর বা সংগ্রহশালা থেকে চুরি যাওয়ার ঘটনা। এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল উইনস্টন চার্চিলের চিঠি চুরির ঘটনা। তিনি অবশ্য ধরা পড়েন। দেখা যায় ওই চোর হলেন ওয়াশিংটনের এক বিখ্যাত সাহিত্যিক। বস্টনের এই লাইব্রেরিটায় বহু বিখ্যাত মানুষদের চিঠি রাখা আছে। যার মধ্যে আব্রাহাম লিঙ্কন, জেমস হুইলারও রয়েছেন।
বাস্তব চরিত্র ছেড়ে কাব্যউপন্যাসে আসি। কবে সেই কালিদাসের কালে ‘মেঘদূত’ রচিত হয়েছে। যার মূল্য প্রতিপাদ্য চিঠি। যে চিঠি পাঠাচ্ছে বিরহী যক্ষ। ভাসমান মেঘ সেই চিঠি নিয়ে চলেছে রামগিরি পর্বতের উপর অলকাপুরিতে। যেখানে যক্ষপ্রিয়া অধীর অপেক্ষায় রয়েছে। তার উদ্বিগ্ন চিত্ত ব্যাকুলতা নিরসনের জন্য যক্ষ মেঘকে রামগিরি পর্বত ও অলকাপুরীর বর্ণনার পাশাপাশি সারা পথেরই দিক নির্দেশ করেছে। সংকৃত সাহিত্য, না কি ভারতের প্রাকৃতিক ভূগোল, মাঝে মাঝে স্বতন্ত্র করাই দুষ্কর হয়ে ওঠে। অসামান্য বিবরণ। শেক্সপিয়ারের নাটকে ট্রয়লাসের চিঠি ক্রেসিডাকে ইংরাজি সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনবদ্য সৃষ্টি।
(ধারাবাহিক) পরের পর্ব বুধবার।