লেখার টেবিলে কবির হাতের কাছে সাজানো থাকতো বায়োকেমিক ওষুধের নানা রকমের শিশি। কবিগুরু বড় একটি নেশা ছিল চিকিৎসা করা। লেখালেখিতে কবিগুরু যতটা সময় দিতেন চিকিৎসক হিসেবে তার চেয়ে কম সময় দিতেন না।
কবির বয়স বাড়ার সাথে সাথে হোমিও চিকিৎসার প্রতি আসক্তি বাড়তে থাকে । অবস্থা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় “লেখার টেবিলে হাতের কাছে সাজানো থাকতো বায়োকেমিক ওষুধের নানা রকমের শিশি। খানিক্ষন পর পরেই বাঁ-হাতে উপুড় করে নিয়ে ডান হাতের তালুতে ঠুকে মুখে পরতেন ঐ শিশি থেকে চার-পাঁচটি করে সাদা বড়ি।
তিনি নিজেকে একজন খ্যাতিমান ডাক্তারে হিসাবে মনে করতে লাগলেন যখন – “ রামগড়ে কাঠের মিস্ত্রির আজন্মের স্নায়ুবিক ব্যাধি রবি ঠাকুরের ওষুধ খেয়ে সেরে গেল।
রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমারের মুখোপাধ্যায়ের ভাই সহৃদকুমার “erysipelas” হয়েছিল , এমন এক জঠিল রোগে রবি ঠাকুরের ডাক্তারিতে কাজ হলো ম্যাজিকের মতো।
বোলপুরে মেনিনজাইটিস আক্রান্ত এক সাঁওতাল ছেলে “এক মিলিয়ন ডাইল্যুশনের পুরিয়া একবার মাত্র খেয়ে ভাল হয়ে গেল।
সে যুগের বিখ্যাত ডাক্তার নীলরতন সরকার পর্যন্ত প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন যে রোগীর সেই টাইফয়েড-আক্রান্ত রানী মহলানবিশকে একান্ত নিজের চিকিৎসায় পুরোপুরি সারিয়ে তুলেছিলেন শখের ডাক্তার রবি ঠাকুর। সে যুগে এমন মিরাকল ঘটাতে পেরে হোমিও ডাক্তার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতই উচ্ছ্বাসিত হয়েছিলেন যে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশকে লেখা এক চিঠিতে কবি লিখেছিলেন, “তুমি তো জান, আমি চিকিৎসাবায়ুগ্রস্ত।
শেষ বয়সের দিকের দিনগুলো সর্ম্পকে রাণী চন্দের স্মৃতিচারণ থেকে পাওয়া যায় “গুরুদেবের গানের বা কবিতার প্রশংসার চেয়ে হাজারগুর খুশী হতেন তিনি যদি কেউ এসে বলতো যে গুরুদেবের ওষুধে তার অমুক অসুখটা সেরে গেছে।
অনেক সময় এমন হতো যে গুরুদেবকে খুশী করার জন্য পেটব্যাথা, মাথাধরা নিয়ে গুরুদেবের কাছে কেউ কেউ উপস্থিত হতেন, আর গুরুদেবের ওষুধ খেয়ে তখুনি তখুনি ভালো হয়ে যেতেন।
এমন হরেক ঘটনার সংকলন নিয়ে লেখক ডাঃ শ্যামল চক্রবর্তী লিখেছেন রবিঠাকুরের ডাক্তারি বইখানি।